জমজম কূপের পানির উপকারিতা
তিনটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য আল্লাহ জমজম কূপের পানির মধ্য দিয়েছে। এই তিনটা
বৈশিষ্ট্য এতটা ইউনিক যে সারা বিশ্বে যত জায়গায় যত প্রাকৃতিক পানি পাওয়া
যায় সমস্ত প্রাকৃতিক পানির চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য জমজম কূপের পানিতে
রয়েছে।জমজম কূপের পানির উপকারিতা নিয়ে বিশ্বের খ্যাতনামা গবেষকরা তাদের অবাক বিস্ময় প্রকাশ
করেছেন।
গবেষণায় দেখিয়েছেন নানা দিক।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন জমজম কূপের পানির উপকারিতা “জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে।” (সুনানে
ইবন মাজাহ, হাদিস ৩০৬২)। পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্যে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সকল পানির চেয়ে উত্তম।
কাবাঘরের ফজিলতের সঙ্গে জমজম কূপের পানির উপকারিতা মাহাত্ম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
জাপানের বিখ্যাত গবেষক মাসরু এমোতো জমজমের পানি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে,
জমজমের এক ফোঁটা পানির যে নিজস্ব খনিজ গুণাগুণ আছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো
পানিতে নেই। তিনি আরো বলেন, সাধারণ পানির এক হাজার ফোঁটার সঙ্গে যদি জমজমের
পানির এক ফোঁটা মেশানো হয়, তাহলে সেই মিশ্রণও জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ হয়।
কেননা জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ পানি পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।
সাধারণ পানির তুলনায় জমজমের পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ
সামান্য বেশি।
পানি বিশেষজ্ঞ ড. ইয়াহইয়া খোশগে জমজম কূপের পানির বিশুদ্ধতা কতটুকু তা নির্ণয়
করার জন্য আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ব্যবহার করেছেন। এই পরীক্ষার পর তিনি বলেন,
জমজমের পানিতে কোনো ধরনের দূষণকারী পদার্থ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শুধু জাপান নয়, জার্মানিতেও জমজম কূপের পানি নিয়ে অনেকেই বিস্তর গবেষণা
করেছেন। তার মধ্যে একজন জার্মান বিজ্ঞানী নাট ফিফার। তার গবেষণা মতে, জমজমের
পানি আশ্চর্যজনকভাবে দেহের সেল সিস্টেমের শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
জমজমের পানি ফ্রেঞ্চ আল্পসের পানি থেকেও বিশুদ্ধ। যেখানে ফ্রেঞ্চ আল্পসের
পানির প্রতি লিটারে বাইকার্বনেটের পরিমাণ ৩৫৭ মিলিগ্রাম সেখানে জমজমের পানির
প্রতি লিটারে বাইকার্বনেটের পরিমাণ ৩৬৬ মিলিগ্রাম।
আরও পরুনঃকোন মাসে বাচ্চা নেওয়া ভাল
জমজমের পানিতে ফ্লুরাইডের উপস্থিতি থাকায় এর জীবাণুনাশক ক্ষমতাও আছে।
জমজম কূপের পানির রাসায়নিক গঠন অ্যালকালাইন প্রকৃতির, যা শরীরের অতিরিক্ত
এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও হৃদযন্ত্রে গঠিত
বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
হজরত মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিন আবু বাকর (মাকবুল) বর্ণনা করেন, আমি হজরত
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বসা ছিলাম। (এমন সময়) এক ব্যাক্তি তাঁর
কাছে এলে তিনি জিজ্ঞাসা করনে, তুমি কোথা থেকে এসেছো?
সে বলল- জমজমের কাছ থেকে।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি তা থেকে প্রয়োজনমত পানি পান করেছ?
সে বলল- তা কিরূপে?
তিনি বললেন, তুমি তা (জমজম) থেকে পান করার সময়-
১. কেবলামুখী হবে।
২. আল্লাহর নাম স্মরণ করবে।
৩. তিনবার নিঃশ্বাস নেবে এবং
৪. তৃপ্তি সহকারে পান করবে।
৫. পানি পান শেষে আল্লাহর প্রশংসা করবে।
কারণ , রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও মুনাফিকদের মধ্যে নিদর্শন এই যে, তারা তৃপ্তি সহকারে জমজমের পানি পান করে না।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় এসেছে, ‘জমজমের এ পানি দাঁড়িয়ে
কেবলামুখী হয়ে তিন নিঃশ্বাসে পান করা সুন্নাত। বরকত ও উপকার পাওয়ার আশায় জমজমের
পানি পান করার সময় এ দোয়া করাও উত্তম-
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা ইলমান নাফি'আ, ওয়ারিজকান ওয়াসিয়া, ওয়াশিফা'আন মিন কুল্লি দায়িন।
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা ইলমান নাফি'আ, ওয়ারিজকান ওয়াসিয়া, ওয়াশিফা'আন মিন কুল্লি দায়িন।
’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্থ রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’ (দারা কুতনী, আব্দুর রাজ্জাক ও হাকেম
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্থ রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’ (দারা কুতনী, আব্দুর রাজ্জাক ও হাকেম
মুমিন মুসলমানের উচিত, জমজম কূপের পানির উপকারিতা পেতে যথাযথ সম্মান ও
দোয়ার সঙ্গে পান করা। মনের একনিষ্ঠ নিয়ত পূরণে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনায় এ
পানি পান করা।
যুগে যুগে অসংখ্য আল্লাহর বান্দা শুধু জমজমের পানি পান করেই দিনের পর দিন
কাটিয়েছেন। কারণ এতে রয়েছে খাদ্যশক্তি।জমজম কূপের পানির উপকারিতা নিয়ে ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, আমি এমন মানুষও দেখেছি, যিনি অর্ধ মাস
কিংবা তারও বেশি সময় শুধু জমজমের পানি পান করেই কাটিয়েছেন।
কখনও ক্ষুধা অনুভব করেননি। অন্যান্যদের সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাওয়াফ
করতেন। তিনি আমায় বলেছেন, একবার তো শুধু জমজমের পানি পান করেই চল্লিশ দিন
কাটিয়েছেন।
হজরত আবু জর গিফারি (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে যখন মক্কায় এসেছিলেন, তখন তিনি
শুধু জমজমের পানি পান করে ৩০ দিন কাটিয়েছিলেন। (যাদুল মায়াদ :
৪/৩৯৩)।
রাসুল (সা.) রোগীদের ওপর জমজমের পানি ছিটাতেন এবং তাদের তা পান করতে দিতেন।
রোগমুক্তির জন্য জমজম পান করার অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের
(রহ.) ছেলে নিজ বাবার ব্যাপারে বলেন, আমি বাবাকে রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য
জমজমের পানি পান করতে দেখেছি।
সেই সঙ্গে তিনি পানি দিয়ে হাত ও মুখ মাসাহ করতেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা :
১১/২১২)। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, আমি জমজমের পানি ব্যবহার করে অনেক রোগ
থেকে মুক্ত হয়েছি।’ (যাদুল মায়াদ : ৪/৩৯৩)।
প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার মতামত
কমেন্টে জানাতে পারেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url