গরমে ছাদ ঠান্ডা রাখার যত উপায়
গ্রীষ্মকালসহ অন্যান্য উষ্ণ ঋতুগুলোতে বহুতল আবাসিক এলাকায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন একদম ওপরের তলার বাসিন্দারা। রোদের প্রখর তাপ সরাসরি ঘরের ছাদে পড়ায় তাপ জমে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা অস্বস্তিকরভাবে বেড়ে যায়।
চলুন তীব্র গরম আবহাওয়াতে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ছায়াদানকারী উঁচু দেয়াল বা নেট স্থাপন
খুব ঘন উপাদান সম্পন্ন কংক্রিটে তৈরি হওয়ায় ছাদের স্ল্যাবগুলো খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য তাপ ধরে রাখে। এই তাপ পরিবাহিত হয় নিচের ফ্ল্যাটগুলোর প্রতিটি কক্ষে। তাই স্ল্যাব পর্যন্ত যেন সূর্যালোক পৌঁছাতে না পারে, তার জন্য উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ছাদে ছায়ার ব্যবস্থা করা। এর ফলে নিদেনপক্ষে ছায়াযুক্ত জায়গাগুলো আশপাশের স্ল্যাবগুলো থেকে অনেক কম গরম থাকে।
এই ছায়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ছাদের সীমানার ধার ঘেষে উঁচু দেয়াল বা নেটের মাধ্যমে। এই নেট বা দেয়াল বিভিন্ন নকশা দিয়ে আকর্ষণীয় করা যায়। সুতরাং ছায়াদানকারী এই স্থাপনা শুধু তাপ নিয়ন্ত্রণই করে না, সেইসঙ্গে দালানের সৌন্দর্যও বাড়ায়। তবে এখানে দেয়াল বা নেটে হালকা রং দেওয়া হচ্ছে কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত।
ছাদে হালকা রঙের প্রলেপ
নানা ধরনের রঙের ভিত্তিতে এর ওপর সূর্যের রশ্মির প্রভাব পরিবর্তিত হয়। এক রঙের হাল্কা রঙগুলো সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে। সবচেয়ে বেশি অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিফলিত করতে পারে সাদা রং। এই রঙের প্রলেপ ছাদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা গাঢ় রঙের ছাদের তুলনায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমাতে পারে। এতে করে ছাদের দেয়ালের মধ্য দিয়ে কম তাপ ঘরে প্রবেশ করবে।
শীতল ছাদ বাতাসের গুণমান উন্নত করে ছাদের স্থায়ীত্ব বাড়াতে পারে। সাদা রং করা ছাদ তাপ প্রতিফলন বৈশিষ্ট্যের কারণে কালো রং করা ছাদের চেয়ে দ্বিগুণ স্থায়ী হয়।
তাপপ্রতিরোধী মেঝে স্থাপন
এটি বেশ খরচ ও সময় সাপেক্ষ কাজ। কারণ এর সঙ্গে ফ্লোরের পুনর্নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়। টাইলস, কংক্রিট এবং পাথরের মতো তাপ-প্রতিরোধী বস্তুগুলো ছাদের মেঝেতে ব্যবহার করা যেতে পারে। গাঢ় রঙের মেঝে সূর্যের আলো শোষণ করে নিচের ফ্লোরে তাপ পরিবাহিত করে কক্ষগুলোকে উত্তপ্ত করে দেয়। অন্যদিকে হালকা রঙের তাপ অপরিবাহী মেঝে সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করে তাপকে দূরে রাখে।
ছাদে নিয়মমাফিক পানি ছিটানো
যে কোনো জায়গা শীতলীকরণের জন্য খুব সাধারণ উপায় হচ্ছে পানি ছিটানো। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মিস্টিং সিস্টেমের মাধ্যমে এই কাজটি করা হয়ে থাকে। এই সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে ছাদের আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা নিরীক্ষণকারী সেন্সর।
সেই সঙ্গে টাইমারের সংযোগ থাকায় দিনের উত্তপ্ত সময়গুলোতে তা সক্রিয় হয়ে গিয়ে পুরো ছাদে পানি ছিটিয়ে দেয়। ফলে ছাদের তাপমাত্রা খুব গরম হয়ে গেলে মিস্টিং ছাদকে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এটি ছাদের মেঝে প্রতিস্থাপন করে নতুন তাপ-প্রতিরোধী মেঝ বসানোর সেরা বিকল্প।
বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি নেই, তবে এই ব্যবস্থা যে করা যাবে না তা নয়। ম্যানুয়ালি কাজটি করার জন্য সার্বক্ষণিক একজন কর্মচারীকে রাখা যেতে পারে। তিনি দিনের উষ্ণ সময়গুলোতে হোস পাইপের সাহায্যে সারা ছাদে পানি ছিটিয়ে দিবেন।
সোলার প্যানেল বসানো
বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বিজ্ঞানের অনন্য অবদান সোলার প্যানেল। এই প্যানেল সূর্যের শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ছাদে স্থাপন করা গ্রিড থেকে এই বিদ্যুৎ বাসাবাড়ির বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়। সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হলে বিদ্যুৎ খরচ অনেকাংশে কমে আসে।
সোলার প্যানেল
বিশেষ করে উষ্ণ মৌসুমগুলোতে উত্তাপ যত সময় ধরে থাকবে, এর গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তত বেশি। এমনকি অল্প তাপেই দীর্ঘক্ষণ যাবত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো চালানো যায়। ফলে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিলও অনেক কম আসে।
ছাদ পরিষ্কার রাখা
যাবতীয় কৌশলই পণ্ডশ্রম হবে যদি সেগুলোর মধ্যে যত্ন না থাকে। সবুজ ছাদের প্রতিটি উদ্ভিদের জন্য সময়মতো পরিচর্যা প্রয়োজন। সীমানা ঘেষে উঁচু দেয়াল বা নেট, সোলার প্যানেল এবং শিঙ্গলগুলো নোংরা থাকলে সকল চেষ্টা বৃথা হবে। তাই সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা আবশ্যক।
প্রায় সময় দেখা যায় চিলেকোঠায় বা ছাদের এক পাশে অনেক জঞ্জাল স্তুপ করে রাখা। বিশৃঙ্খল জিনিস যত বেশি থাকবে, সেখানে উত্তাপ বাড়ার ঝুঁকিও ততটাই বেশি। এমনকি হোস পাইপ দিয়ে পানি ছিটানোর আগে সারা ছাদ ঝাড়ু দিয়ে নেওয়াটা ভালো।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url