জামের বীজের উপকারীতা

 জামবীজের উপকারিতা


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জামের বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কেন জামের বীজ ডায়াবেটিসে এত উপকারী? আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে,”জামের বীজ অধিকাংশ আয়ুর্বেদিক ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। 


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের উপকারের পাশাপাশি জামের বীজও বেশ উপকার করে। তাছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও জামের বীজ খাওয়ার পরামর্শ দেন।

জামের বীজ অধিকাংশ আয়ুর্বেদিক ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। আয়ুর্বেদ এর মতে জাম হল- অ্যাসট্রিনজেন্ট অ্যান্টি-ডিউরেটিক, যা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ কমাতে সাহায্য করে, হাইপোগ্লাইসেমিক গুণ আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ যা ডায়াবেটিসে উপকারী। বিশেষ করে হজমের সমস্যা সমাধানে জামের বীজের বিকল্প হয় না।রোগপ্রতিকারে জাম ডায়াবেটিসে


ডায়াবেটিস রোগী, যাদের হাইব্লাডপ্রেসার নাই এক্ষেত্রে ১ চা-চামচ পরিমাণ সদ্য সংগ্রহকৃত জামবীজ চূর্ণ সকাল-সন্ধ্যায় সেবন করলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।


জামের পাতার রস ৩ চা-চামচ পরিমাণ তাতে সমপরিমাণ ছাগীর দুধ মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় খালি পেটে সেবন করালে ৫-৭ দিনের মধ্যে রক্ত আমাশয় বন্ধ হয়ে যায়।


জামের কচি পাতার রস ৩ চা-চামচ, আমলকীর কচি পাতার রস ৩ চা-চামচ, ছাগীর দুধ ৩ চা-চামচ এবং মধু ২ চা-চামচ একত্রে মিশ্রিত করে সকাল-সন্ধ্যায় খালি পেটে সেবন করলে ১-২ দিনের মধ্যেই উপকার দর্শে।


পিত্ত-বিকৃতজনিত কারণে যখন বমি হতে থাকে, সে সময় ২-১ টি কচি জাম পাতা কুচি কুচি করে ১ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে অর্ধেক করে তাতে ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে সেবন করালে বমি বন্ধ হয় এবং বমি বমি ভাব দূর হয়।


হঠাৎ হাত-পা কেটে বা ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না এমন অবস্থায় জাম পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে রস বের করে কাটা স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।


জামের পুরোনো আঁটি এবং আমের পুরোনো আঁটির শাঁস সমান পরিমাণ নিয়ে চূর্ণ করে সংরক্ষণ করুন। এই চূর্ণ মিহিনগুঁড়ো করতে হবে। ঐ চূর্ণ সকালে ২ চা-চামচ এবং সন্ধ্যায় ২ চা-চামচ নিয়মিত ১৫ দিন সেবন করলেই বীর্য গাঢ় হয় এবং রতিশক্তি বেড়ে যায়।


দাঁত নড়া এবং মাড়ির দুর্বলতায় জামের ছাল পরিমাণমত নিয়ে ৩ গুণ পানিতে ভিজিয়ে সিদ্ধ করে অর্ধেক হলে ঐ পানির দ্বারা গড়গড়া করলে ৫-৭ দিনেই উপকার পাওয়া যায়।


শরীরের কোন স্থানে ক্ষত হয়ে গর্ত হলে এবং ঐ ক্ষতস্থানের ঘা সহজে শুকাচ্ছে না এমন অবস্থায় জামের ছাল চূর্ণ করে মিহিন চালনীতে চেলে ঐ গুঁড়ো ক্ষতস্থানে ছিটিয়ে দিতে হবে দিনে ২ বার। এভাবে ৫-৭ দিন লাগালেই উপকার পাওয়া যায়।


আগুনে পুড়ে কোন স্থান সাদা হয়ে থাকলে এক্ষেত্রে জামের পাতা পিষে আগুনের পোড়া সাদা স্থানে প্রলেপ দিলে ঐ স্থান গায়ের স্বাভাবিক রঙের সাথে মিশে যায়। কিছুদিন ব্যবহার করলে সাদা চিহ্ন আর থাকে না, সেরে যায়।


যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়াতে জামের সির্কা ৩ চা-চামচ পরিমাণ প্রতিদিন ৩ বেলা আহারের পর পর ১৫ দিন সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।


পাকস্থলীর দুর্বলতার কারণে যাদের খাবার ঠিকমত হজম হচ্ছে না, এক্ষেত্রে ১টি পিঁয়াজ কুচি এবং অর্ধেক আদা কুচি আধা কাপ জামের সির্কায় আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে দুপুরে এবং রাতে আহারের মাঝে খেলে খাবার ভালভাবে হজম হয়।


প্র¯্রাবের সাথে যাদের ধাতু নির্গত হয় এক্ষেত্রে জামের ২৪ গ্রাম ফুল, ২৫০ মিলিলিটার পানিতে ভিজিয়ে পিষে বা বেটে নিতে হবে। এরপর মিহিন কাপড়ে ছেঁকে তাতে দ্বিগুণ মিছরী মিশিয়ে শরবত তৈরি করে বোতলে সংরক্ষণ করুন। এই সরবত প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ চা-চামচ পরিমাণ খালি পেটে সেবন করলে মেহ রোগে আরাম পাওয়া যায়।


মাথায় ঘা হয়ে যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে এমন অবস্থায় পাকা জামের বিচি ছাড়িয়ে রস ও মজ্জা দিয়ে মাথায় লেপ দিলে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ঘা শুকিয়ে যায় এবং মাথায় নতুন চুল গজায়।


জামের পাতা শুকিয়ে মিহিন গুঁড়ো করে সেই গুঁড়ো দিয়ে সকাল-বিকাল দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়।


গ্রীষ্মের দাবদাহে হাত-পা জ্বালা পোড়া করলে পাকা-পোক্ত জাম-এর রস হাতে পায়ে মাখলে তৎক্ষণাৎ জ্বালা-পোড়া বন্ধ হয়।


পাকা জাম, বিট লবণ, কাঁচা মরিচ কুচি একত্রে মিশিয়ে ভর্তা বানিয়ে খেলে আহারের রুচি ফিরে আসে।


শীতল প্রকৃতির মানুষ যারা অর্থাৎ অল্প ঠা-া বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথেই সর্দি-কাশিতে ভুগতে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ অর্থাৎ অতিরিক্ত মাত্রায় জাম না খাওয়াই উত্তম। তবে, অল্প পরিমাণ নিয়ম মেনে খেলে অসুবিধা নেই।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url